ফলের মাছি-পোকা সারা বিশ্বের হর্টিকালচার শিল্পের জন্য একটি বড় বাধা। অনেক দেশ একে ‘কোয়ারেন্টাইন পেস্ট’ হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে সংক্রমিত ফল রপ্তানি করা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বাংলাদেশের আমসহ বিভিন্ন ফল আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশে সমস্যার সম্মুখীন হয়।
এই সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল মঞ্জুর খান উদ্ভাবন করেছেন ‘ফ্রুট ফ্লাই ট্র্যাপ’। এটি একটি নতুন ও কার্যকর প্রযুক্তি।
বিভিন্ন দেশে মাছি পোকা দমনে নানান পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় ‘মাসট্র্যাপিং পদ্ধতি’ প্রচলিত। এতে পুরুষ মাছি-পোকা আকৃষ্ট করে ধ্বংস করা হয়। ফলে স্ত্রী পোকার প্রজনন বাধাগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশে সাধারণত লিউর ও সাবান-পানির সংমিশ্রণে তৈরি ট্র্যাপ ব্যবহৃত হয়। তবে এসব পদ্ধতির কার্যকারিতা বজায় রাখা কঠিন।
ড. মঞ্জুর খানের উদ্ভাবিত ট্র্যাপে কীটনাশক বা পানি ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। লিউরের আকর্ষণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছি-পোকা সহজেই এতে প্রবেশ করে। কিন্তু বিশেষ নকশার কারণে একবার প্রবেশ করলে আর বের হতে পারে না। ফলে ট্র্যাপের ভেতরে আটকা পড়ে মারা যায়।
গবেষকের মতে, ‘ফ্রুট ফ্লাই ট্র্যাপ’ কৃষকদের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এটি কম খরচে উৎপাদন করা সম্ভব। কীটনাশকের ব্যবহার কমবে, ব্যয়ও হ্রাস পাবে। পাশাপাশি ফলের গুণগত মান বজায় থাকবে এবং পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই ট্র্যাপ কুমড়া, লাউ, করলা, তরমুজ, বাঙ্গি, আম, পেয়ারা ও ড্রাগন ফলের খেতেও কার্যকর।
একটি ট্র্যাপ তৈরিতে আনুমানিক ৫০ টাকা খরচ হতে পারে। এটি অত্যন্ত সাশ্রয়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী। কৃষকরা একবার কিনলে অন্তত পাঁচ বছর ব্যবহার করতে পারবেন। শুধু লিউর পরিবর্তন করলেই চলবে।
এই প্রযুক্তির কার্যকারিতা ২০২০ সালে নিশ্চিত করা হয়। ২০২৩ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সম্মেলনে এটি উপস্থাপিত হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরা এ উদ্ভাবনের প্রশংসা করেন। গবেষকরা মনে করেন, এর পেটেন্ট নিশ্চিত করা গেলে এটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক উৎপাদন সম্ভব হবে।
অধ্যাপক ড. মঞ্জুর খান ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে এ গবেষণা শুরু করেন। বর্তমানে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের অর্থায়নে নিরাপদ আম উৎপাদনে এ ট্র্যাপের কার্যকারিতা নিয়ে আরও গবেষণা চলছে।
সবজির মধ্যে বাঁধাকপি, ব্রোকলি, গাজর এবং ফুলকপি জনপ্রিয় ও পুষ্টি গুণে সমৃদ্ধ।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ ও তার নেতৃত্বে একদল গবেষক রঙিন সবজির নতুন জাত উদ্ভাবন করছেন। এতে স্যাভয় ক্যাবেজ, বেগুনি ব্রোকলি, লাল বাঁধাকপি, বেগুনি ফুলকপি, রঙিন গাজর ও বিভিন্ন রঙের জুকিনি রয়েছে। এতে রঙিন সবজি রপ্তানির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সূত্র: বাসস