নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের যেসব সুপারিশ ইসির স্বাধীনতা খর্ব করবে সেসব সুপারিশ মানা হবে না- এমন আপত্তি জানিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাতে সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত অন্তত ৯-১০টি সুপারিশে ভিন্ন মত জানিয়েছে সংস্থাটি।
সোমবার (১৭ মার্চ) জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বরাবর সেই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান সংস্থার সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘এ রকম কয়টি প্রস্তাবে আমরা মনে করেছি ইসির স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক ক্ষমতাকে ক্ষুণ্ণ হবে- সেসব বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের কাছে আমরা আমাদের ভিন্নমত ব্যাখ্যাসহ জানিয়েছি। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন প্রস্তাবিত- সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ, এনআইডির জন্য আলাদা অথরিটি, ভোটের ৪৮ ঘণ্টার ভেতরে সার্টিফাই করা, ইসির দায়বদ্ধতা ও কমিশনের শাস্তিসহ অন্তত ৯-১০টি সুপারিশের বিষয়ে ভিন্নমত জানিয়ে ঐকমত্য কমিশনের কাছে আমরা চিঠি দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘সংস্কার কমিশনের সুপারিশে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণে একটি স্বতন্ত্র কমিশন করার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের মত হলো- সেটি করার প্রয়োজন নেই। এছাড়া সীমানা পুনর্নির্ধারণে কমিশনের দেওয়া ফর্মুলায় ইসি মনে করছে শহরাঞ্চলে আসন বেড়ে যাবে। ভোটারসংখ্যা, জনসংখ্যা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা বিবেচনা করে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের পক্ষে মত জানানো হয়েছে।’
এনআইডির জন্য সংস্কার কমিশন আলাদা অথরিটির বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনকে জানিয়েছি ২০০৭ সাল থেকে ইসিতে জন্ম নেওয়া এনআইডি আমাদের থাকা বাঞ্ছনীয়। কেননা, এ কাজে আমাদের অভিজ্ঞ এবং স্কিলড জনবল তৈরি হয়েছে। বরং এটাকে আরও শক্তিশালী করে কলেবরটা বহুমুখী করার প্রস্তাব দিয়েছি। নির্বাচন কমিশন থেকে এ পর্যায়ে ১৮৩টি প্রতিষ্ঠান তথ্য সেবা পাচ্ছে। এই সার্ভিসের উপযোগিতা আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের পর ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সার্টিফাই করার বিষয়ে সুপারিশ রয়েছে সংস্কার কমিশনের। ইসি মনে করে, এটির প্রয়োজন নেই। কারণ, ফলাফলের প্রকাশিত গেজেটই সার্টিফিকেশন। ম্যাকানিজম কী হবে সেটার কোন সঠিক ব্যাখ্যা জানা নেই।’
নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা ও নির্বাচন কমিশনারদের শাস্তির বিষয়ে দেওয়া কমিশন প্রস্তাবিত সুপারিশেও ভিন্নমত ইসির। ইসি সচিব বলেন, ‘নির্বাচন শেষ হওয়ার ৫ বছর, ১০ বছর পর ইসির কমিশনারদের আদালতে দৌড়াতে হবে- এটি কতটা যৌক্তিক? আমি ইমিডিয়েট শর্ত ভঙ্গ করেছি, এটা এখনই বলেন। আর শর্ত ভঙ্গ করলে ইসির শাস্তি ব্যবস্থা তো আছেই- সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বা অন্যান্য আইন আছে। নির্বাচনে জয়ী হবেন একজন, বাকিরা সংক্ষুব্ধ হয়ে যে কোনো অভিযোগই করতে পারেন।’
জানা গেছে, ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কতিপয় সুপারিশের বিপরীতে নির্বাচন কমিশনের মতামত বা অভিমত প্রেরণ’ শিরোনামে চিঠির অনুলিপি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব এবং লেজিসলেটিভ সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিবের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
এর আগে সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন।