দেশে অভিনব কৌশলে বেড়ে চলেছে নানা প্রতারণা ও ছিনতাই। প্রতারণার নিত্যনতুন পন্থা অবলম্বন করে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে একটি ভয়ংকর অপরাধী চক্র।
বর্তমানে নতুন একটি পন্থা দেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্কোপোলামিন, যা হায়োসিন, বা শয়তানের নিঃশ্বাস নামেও পরিচিত। এ পন্থায় একজন প্রতারক কিংবা ছিনতাইকারী ভুক্তভোগীকে চাইলেই কাবু করে নিজের ইশারায় নাচাতে পারেন। প্রতারক যে নির্দেশনাই দেবেন, তা-ই অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন সেই নিরীহ ভুক্তভোগী। বিষয়টি জাদুটোনার মতোই কাজ করে।
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাইস্কুল মার্কেটের মা কসমেটিক এ্যান্ট গিফট দোকানের মালিক মহিদুর আলমর(মজনু)। রবিবার (১০ মার্চ ) দুপুর ১১.৪৫ মিনিটে দিকে তার মা কসমেটিক এ্যান্ট গিফটের দোকানে দুই জন মুখে মাস্ক পড়া ভদ্রলোক ইংরেজীতে কথা বলে একটি শ্যাম্পু কিনতে আসেন।
শ্যাম্পু দেখে পছন্দ হয় ও ২৫০টাকা দাম পরিশোধ করেন তারা। এরপর ভদ্রলোক তাদের কাছ থেকে দুইটা ৫০০ টাকার নোট বের করে দোকানদার মজনুকে টুকামেরে দেয় এবং বলে এক হাজার টাকার একটা নোট দেন। দোকানদার একটা কড়কড়ে এক হাজার টাকার নোট দিয়ে দেয়। এ সময় ঐ ভদ্রলোক বলে এমন নোট না, তাদের কাছ থেকে অরেকটি পুরাতন নোট বের করে দোকানীর মুখের সামনে ধরে বলে এমন নোট দেন। এরপরে দোকানদার মজনুর ক্যাসবাক্রে থাকা ১৩ হাজার টাকা নিয়ে ঐ ভদ্রলোক চম্পট দেয়। কিছু সময়পর দোকানদার তাদের দেখতে পাইনি এবং ক্যাস বক্সে টাকা নাই। প্রতারণাটি সংঘটিত করতে ব্যবহার করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর নেশা ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ বা স্কোপোলামিন।
শয়তানের নিঃশ্বাস একটি হেলুসিনেটিক ড্রাগ। রাসায়নিকভাবে এটি স্কোপোলামিন নামে পরিচিত। স্কোপোলামিন একটি প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে উৎপাদিত ট্রোপেন অ্যালকালয়েড এবং অ্যান্টিকোলিনার্জিক ড্রাগ। এটি হায়োসিন, ডেভিলস ব্রেথ, শয়তানের নিঃশ্বাস, বুরুন্ডাঙ্গা, রোবট ড্রাগ, জম্বি ড্রাগ বা কলম্বিয়ান ডেভিলের নিঃশ্বাস নামেও পরিচিত। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকায় রয়েছে। রোগীকে অপারেশনের আগে অজ্ঞান করতে এটা ব্যবহার করা হয়।
এটি মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। দুর্বৃত্তরা লোকজনকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নিতে এটি ব্যবহার করে। বর্তমানে এটি মাদক হিসাবে বা হেলুসিনেটিক ড্রাগ হিসাবে খুব ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ক্ষতির মাত্রা কোকেন থেকে বহুগুণ বেশি। বাংলাদেশের নয়া আতঙ্ক হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে এ মাদক।
এর প্রভাব এতটাই ভয়ংকর যে, কোনো ব্যক্তিকে সেকেন্ডেই নিজের নিয়ন্ত্রণে অনায়াসেই আনা যায়। ফলে অনেক ব্যবসায়িক এবং করপোরেট সেক্টরেও কর্তাব্যক্তিদের এটি প্রয়োগ করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে থাকে প্রতারক চক্র।