এই পরিস্থিতিতে পড়লে অনেকেই মনে করেন, যে কথা বলার সময় টিকটিকি শব্দ করেছে, সেটি সত্যি হবে। আর এখানেই যোগ রয়েছে খনার উপাখ্যানের। প্রশ্ন হচ্ছে কে এই খনা?
মূলত জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী বাঙালি নারী ছিলেন খনা। বাঙালি লোকসংস্কৃতিতে এখনও অমৃতবাণীর মতো খনার বচনের প্রচলন রয়েছে। বাংলা সাহিত্যের আদি কীর্তির মধ্যে পড়ে খনার বচন।
কাকতালীয় ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে খনা নামের এক বিদুষী মহিলার লোককাহিনী। প্রচলিত মতানুসারে, খনার জন্ম হয়েছে বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের দেউলি গ্রামে। খনার বাবার নাম অনাচার্য। খনা বেড়ে উঠেছিলেন রাজা ধর্মকেতুর শাসনকালে। খনার সঙ্গে বরাহ-মিহিরের এক যোগ রয়েছে।
পরবর্তীতে এই মিহিরের সঙ্গে খনার বিয়ে হয়। আর তারা থাকতে শুরু করেন বঙ্গদেশে। পরে তারা উজ্জয়িনীতে এসে বরাহের সঙ্গে দেখা করেন। বরাহ তার ছেলের আয়ু নিয়ে করা গণনার কথা বললে, খনা তা ভুল প্রমাণিত করেন। এরপর বরাহ অবাক হয়ে ভাবতে থাকেন খনার শক্তি সম্পর্ক।
এরই মাঝে এক জোৎস্নারাতে রাজা বিক্রমাদিত্য আকাশের দিকে তাকিয়ে নক্ষত্রের সংখ্যা জানতে চান। বরাহ এবং মিহির সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলেও খনা অনায়াসে সেই প্রশ্নের উত্তর দেন। খনার এই বুদ্ধিদীপ্ত উত্তরে রাজা বিক্রমাদিত্য মুগ্ধ হয়ে খনাকে তার রাজসভার দশম রত্ন হিসেবে সম্মানিত করবেন বলে স্থির করেন। কিন্তু পুত্রবধূর খ্যাতি মেনে নিতে পারেননি বরাহ।
একজন নারী পাণ্ডিত্যে তাকে অতিক্রম করে যাবে! আত্মমগ্ন বরাহ এরপর মিহিরকে তার স্ত্রী তথা খনার জিভ কেটে নেওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন। বাবার আদেশ শুনে মিহির চমকে উঠেছিলেন। কিন্তু খনা শান্ত হয়ে জানিয়েছিলেন, তাকে যেন সাত দিন সময় দেওয়া হয়। সেই সময়ের মধ্যে তিনি দেশের কৃষক ও সাধারণ মানুষদের জন্য অনর্গল কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলতে চান। এই সাত দিন সাত রাত্রির অনর্গল বচনই খনার বচন নামে পরিচিত।
ফলে সে খনার জ্ঞান লাভ করে। কিন্তু সে তো কথা বলতে পারে না। তাই মানুষ সত্যি কথা বললে শব্দের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয় যে কোন কথাটি সঠিক। কথিত আছে ওই টিকটিকি বংশ বিস্তার করে। আর বর্তমানকালের সমস্ত টিকটিকিই ওই টিকটিকিটির উত্তর প্রজন্ম। বৈজ্ঞানিকভাবে টিকটিকির ডাকা এবং সেই সময় বলা কথা সত্যি হওয়ার কোনও ব্যাখ্যা নেই। তবে লোককাহিনী হিসেবে এটি বেশ প্রচলিত।
news24bd.tv/SC